Saturday, November 25, 2017

ছবির গ্রামে, গানের গ্রামে। নয়া, পিংলা।


Naya-Patachitra-Village-at-Pingla-West-Midnapur-Bengal

মাঝবয়সী মহিলাকে ঘিরে উৎসুক জনতার একটা ছোটোখাটো ভিড়। দু চারজন ফোটোগ্রাফারও আছেন, শাটারের শব্দ হচ্ছে ক্লিক ক্লিক।

মহিলার অবশ্য এইসবে ভ্রুক্ষেপ নেই। তিনি ঘরের দাওয়ায় বসে নিবিষ্ট মনে কাজ করে যাচ্ছেন, ইতস্ততঃ ছড়ান রঙের পাত্র। ক্যানভাসে দক্ষ হাতের তুলির নিপুণ টানে জীবন্ত হয়ে উঠছে ছবি।

ইনি রানী চিত্রকর, ইনি শিল্পী এবং আঁকেন পটচিত্র। শুধু রানী একা নন, পশ্চিম মেদিনীপুরের পিংলা ব্লকের এই নয়া গ্রামের ৭০ টি পরিবারে আছেন প্রায় ২৭০জন শিল্পী। পরিবারের ছেলে বুড়ো মহিলা সবাই মিলে পটচিত্র আঁকেন, এমনকি বাচ্চারাও সোৎসাহে যোগ দেয়। পটশিল্প এই গ্রামের মানুষের রক্তে, বহুযুগ ধরে বংশপরম্পরায় এই শিল্পের ধারা এঁরা বহন করে চলেছেন।

পটচিত্র অতি পুরোন লোকশিল্প। পট্ট হল একটা সংস্কৃত শব্দ যার অর্থ কাপড় বা থান, আর ‘চিত্র’ অর্থাৎ ছবি, এই দুয়ে মিলে এসেছে ‘পটচিত্র’। এই শিল্পের শুরু মনে করা হয় ঊড়িষ্যাতে, পুরী, কোণারক অঞ্চলে। এখানেই রঘুরাজপুর গ্রাম পটশিল্পের জন্য বিখ্যাত। এরপর ধীরে ধীরে পটশিল্প ছড়িয়ে পড়ে বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলে, এমনকি বিহার এবং ঝাড়খন্ডের কিছু অংশেও পটশিল্পীদের দেখা পাওয়া যায়।

Naya-Patachitra-Village-at-Pingla-West-Midnapur-Bengal

যাঁরা পটচিত্র আঁকেন তাঁদের বলা হয় পটুয়া। খাস কোলকাতার কালীঘাট অঞ্চলে উনবিংশ শতক থেকেই পট আঁকা হত। এই অঞ্চলেই পটশিল্পীদের বসত ছিল আর তাঁদের আঁকা ছবি কালীঘাটের পট নামেই বিখ্যাত। আজও কালীঘাটের একটা পাড়ার নাম ‘পটুয়াপাড়া’। শৈল্পিক উৎকর্ষতার জন্য কালীঘাটের পটের খ্যাতি ছিল। এতই সুন্দর হত সেসব ছবি যে মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্যকে চলতি কথায় বর্ণনা করতে গিয়ে বলা হত “ঠিক যেন পটে আঁকা ছবি”। আবার সুসজ্জিতা মহিলাদের কিছুটা হয়ত ব্যাঙ্গার্থেই ডাকা হত “পটের বিবি” বলে।

মুলতঃ তিন ধরনের পট বাংলায় দেখা যায়। এর মধ্যে বিশিষ্ট হচ্ছে ‘জড়ানো’ বা ‘গোটানো’ পট, ইংরেজীতে যাকে বলা যেতে পারে স্ক্রোল। নাম শুনেই বোঝা যাচ্ছে ব্যাপারটা অনেকটা ফিল্মের রোলের মত। কিছুটা কমিকসের ব্যাকরণ মেনে গল্প তৈরী করা হয়। লম্বা পটে পর পর পনেরো থেকে কুড়িটা ছবি আঁকা হয় গল্পের ঘটনাক্রম অনুসারে। এর সঙ্গে বাঁধা হয় গান, সেই কাহিনীর বর্ণণা দিয়ে। পটশিল্পী রোল খুলতে থাকেন এবং একেকটি করে ছবি দর্শকদের সামনে মেলে ধরে গানের মাধ্যমে গল্পটির বর্ণনা করে যান। এই গানের বর্ণনার সাধারণতঃ তিনটি ভাগ থাকে, ১)কাহিনী অর্থাৎ মুল গল্প, ২)মাহাত্ব্য, এতে কাহিনীর মহিমা বর্ণনা আর ৩) ভণিতা বা শিল্পীর নিজের পরিচিতি। এইভাবে দর্শককে একটা অডিও ভিসুয়াল অনুভূতির মধ্যে দিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা হয়। এই ভাবে পট প্রদর্শনকে বলা হয় ‘পট খেলানো’। একসময় পটুয়ারা এই ধরনের পট নিয়ে গ্রামে গ্রামে ঘুরে বেড়াতেন আর পটচিত্র দেখিয়ে আর গান শুনিয়ে মানুষের মনোরঞ্জন করে উপার্জন করতেন।মাঝে মাঝে বিভিন্ন জমিদার বা বিত্তবান মানুষদের বাড়ীতে পুজোপার্বণে পটুয়াদের ডাক পড়ত পট খেলানোর জন্য।

Naya-Patachitra-Village-at-Pingla-West-Midnapur-Bengal


Naya-Patachitra-Village-at-Pingla-West-Midnapur-Bengal

এছাড়াও আছে ‘আড়েলাটাই’ পট আর ‘চৌকোস’ পট। ‘আড়েলাটাই’ পট অর্থাৎ আয়তকার পট আর ‘চৌকোস’ পট হল বর্গক্ষেত্রকার। এই ধরনের পট মুলতঃ ছবি হিসেবেই ঘর সাজানোর কাজে লাগে।

পটুয়ারা পটচিত্র আঁকেন সাধারণতঃ বিভিন্ন সনাতন লোকগাথাকে ভিত্তি করে। বেহুলা লখিন্দর, চন্ডী বা মনসা মঙ্গলের কোন কাহিনী, লক্ষীর পাঁচালী, রাধা কৃষ্ণের লীলাকে ভিত্তি করে বা রামায়ণ মহাভারতের অংশবিশেষ নিয়ে তৈরী হয় পটচিত্রের কাহিনী।আবার সমসাময়িক কোন সামাজিক বিষয়বস্তুর ওপরও আঁকা হয় পট। এছাড়া আড়েলটাই বা চৌকোস পটে দেবদেবী, মানুষজন থেকে শুরু করে জীবজন্তর ছবি সবই আঁকা হয়। ইদানিংকালে পটচিত্র স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পরিবেশ সচেতনতা, নারী ও শিশুদের শিক্ষা এবং অধিকার নিয়ে জনশিক্ষামুলক বিভিন্ন প্রচারের হাতিয়ারও হয়ে উঠেছে।

পট সাধারণতঃ তৈরী হয় কাপড় দিয়ে। থানকে মাপমতো কেটে তার সঙ্গে তেঁতুল বিচির আঠা আর চকের গুঁড়ো মিশিয়ে, রোদে শুকিয়ে পট বানানো হয়। এখন কাগজের পটও হয়, সেক্ষেত্রে কাগজের পিছনে কাপড় সেঁটে দেওয়া হয়।
উজ্জ্বল বলিষ্ঠ রঙের ব্যাবহার পটচিত্রের এক বিশেষ বৈশিষ্ট্য। সমস্ত রঙই সম্পুর্ণ প্রাকৃতিক উপাদান থেকে তৈরী করা হয়। এর মধ্যে মাটি, পাথর থেকে শুরু করে বিভিন্ন গাছপাতা, ফুল, সব্জীর নির্যাস সবই আছে। প্রদীপের কালি থেকে তৈরী হয় কালো রঙ, শঙ্খ গুঁড়ো করে হয় সাদা। হলুদ থেকে বানানো হয় হলুদ রং, অপরাজিতা ফুলের নির্যাস থেকে নীল, কালোজামের নির্যাস থেকে বেগুনী, আলতার লাল, ইত্যাদি বহু জিনিস থেকে তৈরী করা হয় রঙ। রঙের সঙ্গে মেশানো হয় বেলের আঠা, এতে পটের ওপর রঙের বাঁধুনী, ঔজ্বল্য আর স্থায়িত্ব বাড়ে।

মুলধারার ছবি আঁকার সময় শিল্পীরা যেমন পেন্সিল বা চারকোল দিয়ে একটা প্রাথমিক ড্রইং করেন পট আঁকার সময় পটশিল্পীরা সেই পদ্ধতি অনুসরণ করেন না। দক্ষ আঙ্গুলের তুলির টানে পটের ওপর একবারেই তৈরী হয় ছবির আউটলাইন। এরপর রঙ দিয়ে ভরাট করা হয়। রঙের মতই শিল্পীরা তুলিও তৈরী করে নেন নিজেরাই। সাধারণতঃ ইঁদুরের লোম দিয়ে তৈরী হয় তুলি, তাতে লাগানো হয় কাঠের হাতল।
Naya-Patachitra-Village-at-Pingla-West-Midnapur-Bengal

আমার মনে হয়েছে পটচিত্র শিল্পীদের শুধু আঁকিয়ে বললে হয়ত কিছুটা অবমুল্যায়ন করা হবে। এঁরা স্বয়ংসম্পুর্ণ এবং বহুমুখী নৈপুণ্যের অধিকারি শিল্পী। এর প্রতিটি ধাপে, পট তৈরী, রঙ এবং তুলি বানানো, ছবি আঁকা, গান বাঁধা এবং সেই গান গেয়ে পট দেখানো, আলাদা আলাদা দক্ষতার প্রয়োজন এবং সেটি এঁরা করায়ত্ত করেছেন। প্রতিটি পর্যায়ে শিল্পীর নিজস্বতার ছোঁয়া পাওয়া যায়।

নয়াগ্রামের শিল্পীরা এখনও বহন করে চলেছেন সেই পুরোন ঐতিহ্য। রাজ্য সরকারের পুরস্কার তো আছেই, এ গ্রামের অনেক শিল্পীরা রাষ্ট্রপতি পুরস্কারও পেয়েছেন। এঁদের বহু কাজই বিভিন্ন সময় বিদেশে প্রদর্শিত এবং প্রশংসিত হয়েছে। পিংলার পটচিত্র AIACA প্রদত্ত ক্রাফটমার্কও পেয়েছে। বাংলার হস্তশিল্পে পিংলা অবশ্যই আমাদের গর্ব।

প্রতি বছরের মতই এই বছরেও ১০ থেকে ১২ই নভেম্বর নয়া গ্রামে বসেছিল পটশিল্প মেলা যা ‘পটমায়া’ নামে পরিচিতি পেয়েছে। এবার এঁদের মেলা অষ্টমবর্ষে পড়ল। উদ্যোগে ২৭০ জন পটশিল্পীদের নিজস্ব সংগঠন “চিত্রতরু”। এছাড়া প্রতি বছরের মতই সঙ্গে আছেন বাংলানাটক ডট কম (www.banglanatak.com) একটি এনজিও, যাঁরা পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্তের লোকশিল্পের পরিচিতি, উন্নয়ন এবং লোকশিল্পের ধারাটি বজায় রাখার জন্য নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছেন।

Naya-Patachitra-Village-at-Pingla-West-Midnapur-Bengal
Workshop in progress for children on making of Patachitra - Naya
এই তিনটি দিনে নয়া তে যেন রঙের উৎসব। আমি গিয়েছিলাম তৃতীয় অর্থাৎ শেষদিন, রবিবার। এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা। গ্রামের প্রতিটি শিল্পীর বাড়ি যেন এক একটি আর্ট গ্যালারী, সবাই পটের পসরা সাজিয়েছেন। দারূণ সুন্দর সব জিনিস। শুধু পট নয়, যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পটের চিত্র এখন নেমে এসেছে কাপড়ে। টি শার্ট, কুর্তা, পাঞ্জাবী, ওড়না শাড়ী সবেতেই নিপুণ হাতে ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে পটের ছবি। এখানে অবশ্য চিরকালীন প্রাকৃতিক রঙের বদলে ব্যাবহার করা হয় ফেব্রিক পেন্ট। এছাড়াও মাটির ও বাঁশের পেন স্ট্যান্ড, অ্যাশট্রে, গয়নার বাক্স, মায় হাতপাখা আর ছাতাতেও রয়েছে পটচিত্র। অনেক গ্রামের বাড়ীর দেওয়ালেও আঁকা অপুর্ব সুন্দর সব ছবি। নিজেদের ঘরের দাওয়ায় বসে শিল্পীরা ছবি এঁকে চলেছেন আবার বিক্রিবাটা থেকে উৎসাহী দর্শকদের প্রশ্নের উত্তর দেওয়া সবই চলছে সমানতালে। দুই জায়গায় শুনলাম পটের গান। একজায়গায় মনসা মঙ্গল থেকে চাঁদ সদাগরের গল্প শোনাচ্ছিলেন শিল্পী, তার কিছুটা রেকর্ড করতে পেরেছিলাম।

Naya-Patachitra-Village-at-Pingla-West-Midnapur-Bengal

Naya-Patachitra-Village-at-Pingla-West-Midnapur-Bengal

Naya-Patachitra-Village-at-Pingla-West-Midnapur-Bengal

Naya-Patachitra-Village-at-Pingla-West-Midnapur-Bengal

Naya-Patachitra-Village-at-Pingla-West-Midnapur-Bengal

Naya-Patachitra-Village-at-Pingla-West-Midnapur-Bengal

এই গ্রামের প্রায় সব শিল্পীদেরই পদবি হল চিত্রকর। পেশা এবং পদবীর সার্থক মিল বলা যেতে পারে। আরো একটি ব্যাপার, এই গ্রামের শিল্পীরা প্রায় সবাই ধর্মে মুসলমান। কিন্তু পটচিত্রে এঁরা লোকায়ত থেকে হিন্দু সব দেবদেবী এবং মানুষের চরিত্র সবকিছুই ফুটিয়ে তোলেন। ইসলামে পৌত্তলিকতা এবং শিল্পের মাধ্যমে কোনরকম ফিগারেটিভ প্রদর্শন নিষিদ্ধ। কিন্তু কোন ধর্মীয় প্রভাব এই শিল্পীদের মধ্যে পড়েনি বা কখনো এঁদের শিল্পসৃষ্টির পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। এঁরা আপন খেয়ালে এবং ভালোবেসে বহুপ্রজন্মচর্চিত এই শিল্পের ধারাকে বয়ে নিয়ে চলেছেন। আজ এই বিভেদের যুগে এ এক আশ্চর্য সংহতির বীজমন্ত্র। এখনও এই গ্রামে আজানের সুর মিলে যায় পটুয়াদের মনসামঙ্গলের গানের সুরে।

Naya-Patachitra-Village-at-Pingla-West-Midnapur-Bengal

ছোট্ট ছুটির অবসরে চলে যেতে পারেন নয়া গ্রাম। শিল্পীদের দরজা সারাবছরই অতিথিদের জন্য খোলা, চলে বিকিকিনির মেলা। সামনে থেকে দেখতে পারেন এঁদের কাজ। ইচ্ছামত কেনাকাটাও করতে পারবেন।ঘর সাজানোর জন্য পট বা প্রিয়জনের জন্য শাড়ী বা অন্য কিছু, এছাড়াও টুকিটাকি বহু জিনিস।

Naya-Patachitra-Village-at-Pingla-West-Midnapur-Bengal

Naya-Patachitra-Village-at-Pingla-West-Midnapur-Bengal

Naya-Patachitra-Village-at-Pingla-West-Midnapur-Bengal

নয়া কলকাতার খুব কাছেই, মাত্র ১৩০ কিলোমিটার দূরে। একদিনেই ঘুরে আসতে পারবেন। ট্রেনে গেলে হাওড়া থেকে চড়ে নামুন দক্ষিণপুর্ব রেল সেকশানের বালিচক স্টেশানে। সেখান থেকে বাস বা অটোতে নয়া গ্রাম চার কিলোমিটার মতো।

গাড়িতে এলে কলকাতা থেকে এন-এইচ সিক্স বা মুম্বাই রোড হয়ে কোলাঘাট ব্রীজ পেরিয়ে সোজা ডেবরা। ডেবরার মোড়ের কাছে ফ্লাইওভার না ধরে সার্ভিস রোড ধরে এগিয়ে বাঁ দিকে ঘুরে সোজা বেশ কিছুটা এসে বালিচক স্টেশনের কাছে রেল গেট পেরোনর পর কিছুদুর গিয়েই মুন্ডমারীর মোড়। সেখান থেকে আবার বাঁদিকে ঘুরে কিলোমিটার তিনেক গেলেই রাস্তার বাঁ দিকে পড়বে নয়া। দেখবেন কাছাকাছি দুটো পেট্রল পাম্প আছে রাস্তার দুপাশে।

যদি চান থাকার বন্দোবস্তও হয়ে যাবে। থাকার আর অনান্য খবরাখবরের জন্য যোগাযোগ করুন এখানে।

চিত্রতরু
গ্রাম এবং পোস্ট নয়া,
জেলা পশ্চিম মেদিনীপুর,
পিন – ৭২১ ১৪০
ফোনঃ ৯৭৩৩৫২১৩৩৫

Naya, The village of Patachitra Artisans of Bengal. Pingla, West Midnapore

ঘুরে আসুন ডোকরা শিল্পের গ্রাম, বর্ধমানের দরিয়াপুর।

Dariyapur-Dokra-Art-village-of-West-Bengal-near-Guskara-Burdwan
Work by artisans of Dariyapur Burdwan
বেশ কিছুদিন আগে এক বন্ধুর বাড়ীর ড্রয়িংরুমে একটি ডোকরার দুর্গামুর্তি দেখেছিলাম। মানে অসুর, সিংহ, লক্ষী, সরস্বতী, কার্তিক গনেশ সব নিয়ে। অসাধারণ ডিটেইলিং এ কাজ। আমার খুব ভালো লেগেছিল। আমার ধারণা হয়েছিল হয়ত ছত্তিসগড়ের বস্তার জেলা থেকে আনানো কারণ ডোকরা শিল্পের আঁতুড়ঘর হিসাবে বস্তারকেই ধরা হয়, আর প্রচুর ভালো শিল্পীও ওখানে আছেন। কিন্তু সেই বন্ধুর থেকে জেনেছিলাম ওর ডোকরার কাজটি পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানের কোনো শিল্পীর হাতে গড়া এবং সেখানে রীতিমতো ডোকরাশিল্পীদের গ্রাম আছে যেখানে এমন প্রচুর ভালো কাজ হয়।

সেই থেকেই ইচ্ছেটা জেগেছিল গ্রামটা ঘুরে আসার। এর পরে জেনেছি গ্রামের নাম দরিয়াপুর, গুসকরা থেকে খুবই কাছে।

সুযোগটা এল অক্টোবর মাসে, বাংলানাটক ডট কম এর সৌজন্যে। বাংলানাটক www.banglanatak.com একটি এন জি ও এবং এরা পশ্চিমবঙ্গের লোকসংস্কৃতি এবং লোকশিল্প নিয়ে বহুদিন ধরে কাজ করে চলেছেন। প্রান্তিক এবং লোকশিল্পীদের সহযোগিতা, পরিচিতি বাড়ানো এবং তাঁদের স্বনির্ভরতা অর্জনের লক্ষ্যে এনারা কাজ করেন। এই কাজেরই অঙ্গ হিসাবে পশ্চিমবঙ্গের অনেকগুলি এমন লোকশিল্পীদের গ্রাম এনারা শনাক্ত করেছেন যেগুলি প্রকৃত অর্থেই অনন্য এবং এই জায়গাগুলিতে বাংলার নিজস্ব হস্তশিল্প, গান, বাজনা ইত্যাদি এখনো বেঁচে আছে। এর মধ্যে পুরুলিয়ায় ছৌ মুখোশের গ্রাম চড়িদা, বাঁকুড়ার নানুরের কাঁথা শিল্প, বর্ধমানের নতুনগ্রামের কাঠের পুতুল, পাঁচমুড়ার টেরাকোটার কাজ, পশ্চিম মেদিনীপুরের পিংলা গ্রামের পটচিত্র, দক্ষিণ দিনাজপুরের কুশমান্ডিতে কাঠের মুখোশের কাজ যেমন আছে তেমনিই আছে নদীয়া জেলার গোরভাঙ্গায় লালন ফকিরের ভাবাদর্শে অনুপ্রাণিত সুফি ফকিরদের গ্রাম। সুর যেখানে বাতাসে ভেসে বেড়ায়। এসব জায়গায় বছরের বিভিন্ন সময় ধরে বাংলানাটকের উদ্যোগে স্থানীয় শিল্পীগোষ্ঠিরা আয়োজন করেন হস্তশিল্পমেলার, তাঁদের নিজেদের গ্রামেই। উদ্দেশ্য যাতে লোকজন জানতে পারেন, আসতে এবং দেখতে পারেন আর বিক্রীবাটাও হয়। উৎসাহী পর্যটকরা গ্রামে এসে নিজের চোখে দেখতে পারেন কিভাবে শিল্পীরা সৃষ্টি করছেন এবং তৈরীর পদ্ধতির খুঁটিনাটি। চাইলে হাতেনাতে শেখার জন্য ছোটছোট ওয়ার্কশপও করা হয়। এছাড়াও কোলকাতায় এবং বিভিন্ন জেলাতে স্থানীয় লোকশিল্পীদের নিয়ে লাইভ অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়। এর মধ্যে, বাউলগান, ভাওয়াইয়া, ঝুমুর গান, ফকিরি গান, ছৌনৃত্য, রায়বেঁশে নৃত্য সবই থাকে, আবার বিভিন্ন দেশের লোকশিল্পীদের এনে যৌথ অনুষ্ঠান, ওয়ার্কশপ ইত্যাদির মাধ্যমে একটা সাংস্কৃতিক আদানপ্রদানের জায়গাও এঁরা তৈরী করেন।

যাই হোক এত কথা বললাম এই জন্য যে এই রকম উদ্যোগের খুব প্রয়োজন আছে আজকের দিনে। লোকায়ত সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য এই ধরনের উদ্যোগ একান্ত দরকার, নইলে স্রেফ অর্থনৈতিক কারণেই এই সব শিল্পীরা এবং সঙ্গে তাঁদের নিজস্ব শিল্পকলা ক্রমশঃ হারিয়ে যাবে। আশার কথা বর্তমান সরকার লোকশিল্পীদের সহায়তা, পরিচিতির জন্য অনেক কিছুই করছেন। এছাড়া বেসরকারী ক্ষেত্র থেকেও সাহায্য এলে শিল্প এবং শিল্পী দুইই বাঁচে।

এবছর দরিয়াপুরে মেলার আয়োজন হয়েছিল ১৩-১৫ অক্টোবর। এটা এঁদের তৃতীয় বর্ষ। আমার হাতে সময় ছিল মাত্র একদিন সেজন্য শনিবারে ডে ট্রিপে গাড়ী নিয়ে পৌঁছে গিয়েছিলাম। গুসকরা স্টেশন থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে দরিয়াপুর গ্রাম, একেবারে রাস্তার ওপরেই। মেলা উপলক্ষ্যে তোরণ করা হয়েছে, চোখ এড়িয়ে যাওয়ার উপায় নেই। ভিতরে ঢুকেই পাকা দোতলা বাড়ী, সেটা দরিয়াপুর ডোকরা আর্টিজানস কো-অপারেটিভ ইন্ডাস্ট্রিয়াল সোসাই্টি লিমিটেড' এর অফিস। নিচে ছোট হলঘরে কিছু বাছাইকরা ডোকরার কাজ সাজানো আছে। মুগ্ধ করার মতো শিল্পশৈলী। এখানকার অনেক শিল্পীই উৎকর্ষের স্বীস্কৃতি হিসেবে রাষ্ট্রপতি পুরস্কার পেয়েছেন।
Dariyapur-Dokra-Art-village-of-West-Bengal-near-Guskara-Burdwan
The entrance of Dariyapur village during the fair
বাড়ীর পাশেই মঞ্চ করে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন, মূল পর্ব সন্ধ্যেবেলায়, সুতরাং আমার দেখা হবে না। সেখানে বাউল, ভাওয়াইয়া, ঝুমুর, টুসু গান সবই হবে। পাশে দেখি পুতুল নাচের যোগাড় চলছে। ছোট্ট একটা কাপড়ের স্টেজ, হাতে আঁকা ব্যাকড্রপ আর পিছনে শিল্পী রঙিন জামাকাপড় পরা পুতুলদের নাচের সুতো ঠিক করছেন। চতুর্দিকে কচিকাঁচাদের ভিড়। এর মধ্যেই এক লোকশিল্পী হারমোনিয়াম আর খোল সহ একটা কীর্তন আঙ্গিকের গান ধরলেন।আসর মুহুর্তে জমজমাট।
Dariyapur-Dokra-Art-village-of-West-Bengal-near-Guskara-Burdwan
The preparation for the 'Putul Nach' performance
ভিড় মোটামুটি। স্থানীয় মানুষ ছাড়াও কোলকাতা থেকে আসা উৎসাহী মানুষও প্রচুর। ক্যামেরাধারীরাও আছেন ভালো ছবির আশায়।

পিছনদিকেই আসল গ্রাম। ছোট ছোট মাটীর ঘর শিল্পীদের, পাকা বাড়ীও আছে, তারমধ্যে দিয়ে পায়ে চলা পথ এঁকেবেঁকে গিয়েছে গ্রামের মধ্যে দিয়ে। ঘরকন্না, রান্নাবান্নার পরিচিত খন্ডদৃশ্যের সঙ্গে দেখা যাচ্ছে সমান তালে চলছে ডোকরার কাজ। পুরুষ মহিলা নির্বিষেশে হাত লাগিয়েছেন। কোথাও জ্বলছে ভাঁটি, ধোঁয়া পাকিয়ে উঠছে, সারি সারি মাটির ছাঁচ শুকোচ্ছে রোদে, কোথাও তৈরী ডোকরার মুর্তি মেশিন পালিশ হচ্ছে, শিল্পীরা খুদে ছেনি দিয়ে অদ্ভুত দক্ষতায় ছাঁচ ভাঙ্গা ছোট ছোট ধাতুর মুর্তির গায়ের নকশা ঠিক করছেন। দেবদেবীর মুর্তির সঙ্গে টিপিকাল ডোকরা স্টাইলে করা জন্তুজানোয়ার, প্রদীপদানী, পেপারওয়েট, আদিবাসী মানুষের অবয়ব সবই আছে।

Dariyapur-Dokra-Art-village-of-West-Bengal-near-Guskara-Burdwan
The village of Dariyapur. Note the paintings on the wall 
Dariyapur-Dokra-Art-village-of-West-Bengal-near-Guskara-Burdwan
Life at the village
Dariyapur-Dokra-Art-village-of-West-Bengal-near-Guskara-Burdwan
The clay molds being dried in the sun
প্রত্যেক শিল্পীর বাড়ির সামনের আঙিনাই এখন একএকটা আর্ট গ্যালারী। প্লাস্টিকের টেবিলে থরে থরে সাজান নিজেদের শিল্পকর্ম, বিক্রির জন্য। একই সঙ্গে কাজও চলছে। মহিলারা বাচ্চা সামলানোর সঙ্গে সঙ্গে সমান্ তালে দরাদরি বিক্রীবাটা সামলাচ্ছেন আর উৎসাহী মানুষের প্রশ্নের উত্তরও দিয়ে যাচ্ছেন।
Dariyapur-Dokra-Art-village-of-West-Bengal-near-Guskara-Burdwan
The Dokra artifacts on display at an artist's house
Dariyapur-Dokra-Art-village-of-West-Bengal-near-Guskara-Burdwan
The Artisans put up tables in front of their homes to display their work
Dariyapur-Dokra-Art-village-of-West-Bengal-near-Guskara-Burdwan
The three day fair gives the artisans a scope to display and sell their art right from their home
Dariyapur-Dokra-Art-village-of-West-Bengal-near-Guskara-Burdwan
Balancing life between managing household chores, bring up kids and creating fantastic art requiring lot of love and hard work is no easy task but these women manage it with aplomb
Dariyapur-Dokra-Art-village-of-West-Bengal-near-Guskara-Burdwan
The little Goddess. It was heartening to see that the children of Dariyapur village take active interest in the art and helps parents in their work. The next generation must be interested to keep the art form alive
Dariyapur-Dokra-Art-village-of-West-Bengal-near-Guskara-Burdwan
The father and son finds some fun time while their pet goat takes shelter under the table
Dariyapur-Dokra-Art-village-of-West-Bengal-near-Guskara-Burdwan
This little girl keeps vigil while her parents are away
Dariyapur-Dokra-Art-village-of-West-Bengal-near-Guskara-Burdwan
A girl looks at the curious visitors at her home
Dariyapur-Dokra-Art-village-of-West-Bengal-near-Guskara-Burdwan
An amazing variety of idols and other artifacts on sale

এই গ্রামের শিল্পীদের বেশীরভাগের পদবীই হল কর্মকার। এঁরা বেশ কয়েক প্রজন্ম ধরে ডোকরার কাজ করে আসছেন।এই কর্মকাররা হলেন জাত শিল্পী। পশ্চিমবঙ্গের বহু বিখ্যাত টেরাকোটার মন্দিরের প্যানেলের অতিসুক্ষ কারুকাজ এই কর্মকার সম্প্র্দায়ের হাতেই গড়া। আর ডোকরা হল ভারতবর্ষের অন্যতম পুরোন আদিবাসী শিল্পকলা। মনে করা হয় মোমের ছাঁচ থেকে ধাতুর মুর্তি তৈরীর এই শিল্প প্রায় চার হাজার বছরের পুরোন। এমনকি মহেঞ্জোদড়ো সভ্যতাতেও এই ধরনের কাজের উদাহরণ পাওয়া গেছে। আগেই বলেছি ছত্তিসগড়ের জঙ্গলাকীর্ণ বস্তার জেলাই হল ডোকরা শিল্পীদের আদিভুমি। এটাও মনে করা হয়
, ডোকরা কথাটা এসেছে এই অঞ্চলের ডোকরা নামের ভুমিজ জনগোষ্ঠি থেকে যাঁরা এই শিল্পকলার চর্চা করতেন বহুযুগ ধরে। এখনও জগদলপুর শহরের কাছেই কোন্ডাগাঁও হল ডোকরা শিল্পের ভারতবিখ্যাত কেন্দ্র। বহু গুনী শিল্পী এখানে আছেন যাঁদের কাজ দেশে বিদেশে সমাদৃত হয়েছে। এখান থেকেই হয়ত শিল্পীরা ক্রমশঃ ছড়িয়ে পড়েছিলেন ভারতে্র বিভিন্ন জায়গায়। এখন ডোকরা শিল্পীদের দেখা পাওয়া যায় ঊড়িষ্যায়, ঝাড়খন্ডে, অন্ধ্রপ্রদেশে এবং অবশ্যই পশ্চিমবঙ্গে। যদিও সঠিক কোন তথ্য আমি এখনো খুঁজে পাই নি তবে অনুমান করা যেতেই পারে যে সেই প্রাচীন জনজাতির একটা অংশ হয়ত কোনো সুদুর অতীতে এই অঞ্চলে এসে পড়েছিলেন এবং তাঁদের হাত ধরেই স্থানীয় মানুষেরা এই বিদ্যা রপ্ত করেন এবং ক্রমশ: এই গ্রামে তার শ্রীবৃদ্ধি ঘটে। যুগ যুগ ধরে বিভিন্ন শিল্পকলা এইভাবেই তার ক্রম:বিস্তারের পথ খুঁজে নিয়েছে, এখানেও তার ব্যাত্যয় হয়নি।

ডোকরা শিল্প সৃষ্টির পদ্ধতিঃ
১। মাটীর মন্ড দিয়ে প্রথমে ঈপ্সিত মুর্তিটি তৈরি করা হয়।
২। এরপর মাটীর সেই মুর্তিটির ছাঁচের উপর মোম এবং ধুনোর তৈরী একটি মিশ্রণের প্রলেপ দেওয়া হয়।
৩। এরপর মুর্তির বাইরের আবরণের উপর মোমের সুতো দিয়ে সুক্ষ নকশা ফুটিয়ে তোলা হয়।
৪। এরপর পাতলা মাটীর মন্ড দিয়ে ছাঁচটি পুরোটা ভরাট করা হয়। তারপর তাতে পিতল গলে গিয়ে ভিতরে ঢোকার একটা পথ করা হয়। ওই পথ দিয়ে গলিত পিতল ছাঁচের মধ্যে ঢুকে যায়।
৫। এরপর ছাঁচে ঢালাই মুর্তিটিকে আগুনে পোড়াতে হয়। পথটিকে ভরাট করে দিতে হয় পিতলের টুকরো দিয়ে। আগুনের আঁচে পিতল গলে মুর্তিটির সঙ্গে মিশে যায়। গরম মাটি দিয়ে ফুটোটিকে বন্ধ করতে হয়।
৬। ঢালাইয়ের কাজ শেষ হওয়ার পর ছেনি ও হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে মাটিগুলোকে বের করে দিতে হয়।মুর্তির গায়ে ধাতুর বাড়তি অংশগুলিকে কেটে ফেলে দিতে হয়। এরপর মেশিন দিয়ে মুর্তিটিকে মসৃণ করে নিতে হয়। শেষে থাকে পালিশের কাজ।

Dariyapur-Dokra-Art-village-of-West-Bengal-near-Guskara-Burdwan
The making of Dokra. The clay molds being made and dried

Dariyapur-Dokra-Art-village-of-West-Bengal-near-Guskara-Burdwan
The making of Dokra. The artifacts being extracted from the mold

Dariyapur-Dokra-Art-village-of-West-Bengal-near-Guskara-Burdwan
The making of Dokra, The molds are being put in the wood fired oven
Dariyapur-Dokra-Art-village-of-West-Bengal-near-Guskara-Burdwan
Once the artifacts are taken out of the clay mold some imperfections are corrected with chisel and hammer
Dariyapur-Dokra-Art-village-of-West-Bengal-near-Guskara-Burdwan
The making of Dokra - Final touch being given on smaller artifacts
Dariyapur-Dokra-Art-village-of-West-Bengal-near-Guskara-Burdwan
An artisan is busy machine polishing his creations.
Dariyapur-Dokra-Art-village-of-West-Bengal-near-Guskara-Burdwan
Artifacts being machine polished to perfection
ওপরের বর্ণনাটি পড়ে নিশ্চই বুঝতে পারছেন ব্যাপারটা বেশ পরিশ্রমসাধ্য ও সময়সাপেক্ষ। সামনে দাঁড়িয়ে কাজটা যদি দেখেন তাহলে ধারণাটা আরও পরিষ্কার হবে। দুঃখের ব্যাপার হল বিভিন্ন মহলের অনেক চেষ্টা সত্ত্বেও সব শিল্পীরা তাঁদের শিল্পকর্মের যোগ্য দাম পান না। গ্রাম ঘুরে শিল্পীদের অর্থনৈতিক স্বাচ্ছন্দ্য সম্বন্ধে আমার বিশেষ উচ্চ ধারণা হয়নি, বরং অনেক পরিবার অসুবিধাতেই আছেন বলে মনে হল। এরপর আমি দেখলাম যাঁরা বাইরে থেকে গেছেন, কিছু কিছু কিনছেন, কিন্তু সেখানে তুমুল দরদাম চলছে। এই ব্যাপারটাও আমার ব্যাক্তিগতভবে পছন্দ হয়নি। আমার অভিজ্ঞতায় বলছে শিল্পীরা যা দাম রেখেছেন সেটা খুব যে একটা অযৌক্তিক তা বলা যায় না। সেটাকে যদি জোরজবরদস্তি টেনে না নামানো হয় তাহলে ভালো হয়। দয়া দাক্ষিণ্যের ব্যাপার নয়, কিন্তু শিল্পের মর্যাদা আর শিল্পীর সন্মানটা দিয়ে ন্যায্য দাম যদি দেওয়া হয় আমার মনে হয়না সবার খুব একটা অসুবিধে হবে।
Dariyapur-Dokra-Art-village-of-West-Bengal-near-Guskara-Burdwan
An artisan gets his work ready for display
আমি মেলার সময় গেলেও এই গ্রামের দ্বার সারা বছরই অতিথিদের জন্য উন্মুক্ত। একদিনের ছোট্ট ট্রিপে ঘুরে আসা একটা দারুণ অভিজ্ঞতা হতে পারে। চাইলে রাতে থাকার ব্যাবস্থাও হয়ে যাবে। আতিশয্য হয়ত পাবেন না, অতি সাধারণ বন্দোবস্ত, কিন্তু আতিথেয়তার, আন্তরিকতার কোন খামতিও থাকবে না।
যাবার পথনির্দেশ আর থাকার বন্দোবস্তের ঠিকানা নিচে রইল।

ট্রেনে গেলে হাওড়া থেকে গুসকরা স্টেশনে নামতে হবে। স্টেশন থেকে দরিয়াপুর মাত্র চার কিলোমিটার। টোটো পাবেন, স্টেশন চত্বর থেকে ভাড়ার গাড়িও।

গাড়ীতে এলে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে ধরে বর্ধমান। বর্ধমান পেরনোর ঠিক পরেই ডান দিকে ১০৮ শিব মন্দিরের রাস্তা ধরতে হবে। এই রাস্তাই তালিত রেল গেট পেরিয়ে সোজা গেছে গুসকরা। গুসকরার মোড়ে ত্রিকোণ ট্রাফিক আইল্যান্ড পৌঁছে আবার বাঁ দিকে ঘুরতে হবে। এই রাস্তাটা সোজা গেছে গুসকরা স্টেশান, সেখান থেকে রেল্ গেট পেরিয়ে বাঁদিকে সোজা রাস্তা গেছে দরিয়াপুর। অসুবিধে হয়ে স্থানীয় কাউকে জিজ্ঞাসা করে নেবেন। কোলকাতা থেকে পৌঁছতে তিন সাড়ে তিন ঘ্ন্টা লাগবে।
থাকার জন্য যোগাযোগ করতে পারেন নিচের নম্বরগুলিতে।

সুভাষ মন্ডল ৯৭৩৫২২৮০৮৬
শুভ কর্মকার ৯১৫৩২৫৫৯৫৫
অশোক কর্মকার ৯৬৩৫৬৭৩০৮২


এই লেখাটা যদি ভাল লেগে থাকে তাহলে অনুরোধ করব শেয়ার করার জন্য। আমার ইচ্ছা যত বেশী মানুষ এর সম্বন্ধে জানতে পারবেন ততই এই শিল্পীদের জন্য মঙ্গল। দেশের প্রাচীন এক শিল্পকলাকে বাঁচিয়ে রাখার কিছুটা দায় তো আমাদেরও থাকে।

Here is an English version for readers who cannot read Bengali:

Next Weekend Drive down to Dariyapur –The Dokra Art village of Bengal near Guskara, Burdwan

 Dariyapur is just another village deep inside the rural heartlands of Burdwan. But this place is unique in its own way and definitely worth a visit. This is a village of the artisans who are keeping alive a tribal art which is estimated to be more than 4000 years old and has its roots found at the ancient civilization site of Mohenjo-Daro.

Dokra art is believed to be practiced by a tribe by the same name who hailed from the forested district of Bastar of present day Chattisgarh. Over the years the artisans from Bastar spread across Indian and dokra art can now be found at various places in the state of Andhra Pradesh, Odisha, Jharkhand & West Bengal.

The artisans at Dariyapur village is making Dokra artifacts through several generations and it is not exactly known how this art form found it’s place at this quaint little village in Burdwan as there is no direct link found. It may be assumed that the artisans learnt the art several generations ago from descendants of the ancient tribes of Chattisgarh, some of whom might have migrated to this part of Bengal.

Most of the artisans are ‘Karmakar’ by their title. The ‘Karmakar’ clan can be found in many part of southern and western part of Bengal. The intricate terracotta works found on various temples dotted across the rural Bengal are the handiwork of the Karmakar clan.

This is a village where you can experience how Dokra artifacts are produced as it goes through an elaborate process. It is complicated, time consuming and lot of hard work but these people produce some pretty remarkable stuff. There is an amazing range of products available right from the figures of the Gods and Goddesses, human and animal figures, various art objects and jewelry. Some of the artisans here are recipients of president’s award in recognition of their work. Despite the fine work I felt that the artisans are faring not too well economically. At least not enough to attract the next generations. Like any ancient folk and tribal art form this is also under threat and though they are getting some patronage from the govt and few NGOs they need lot more support. 

I went there when a three day art fair was on and the entire village was literally transformed into an open air art gallery. In addition to that there were arrangements for folk songs and music like Bhawaiya, Tusu, Fakiri etc in the evening. But since I was on a day trip and bound with a tight schedule I couldn’t experience that.

The village keeps its door open for visitors round the year and one can go anytime to experience the art. This can easily be covered in a day trip but should you want to spend a night there, accommodation is also available.  Arrangement is basic but there will be no dearth of warmth and hospitality. Surely you will have a pleasant memory of your stay deep in rural Bengal.

Driving Direction:
The drive will take three and half hours to four hours even at a leisurely pace. Drive through NH-2 past Burdwan and then turn right onto the state highway that is running past the famous 108 Shib Mandir. The entire stretch of this road is beautiful and green is the predominant color here in various shades. You will get an idea why this part of the country is known as the “Rice Bowl of Bengal.  You will cross Talit level crossing and keep driving straight till you reach the triangular traffic island at Guskara.  From here you need to turn left and proceed past Guskara Railway station. Once you cross the railway track you need to take the left fork which will take you to Dariyapur. From Guskara railway station the village is only about 5 kms and right on the main road.  This road is in good shape all along and shouldn’t be a bother. The long waiting time at Talit rail gate is the only irksome factor but you might just be lucky and find the gate open.

For Stay Arrangements contact the following:

Subhas Mondal - 9735228086
Subho Karmakar - 9153255055
Ashok Karmakar - 9635673082

Do share this article to spread awareness about this ancient art of Bengal

Saturday, September 23, 2017

Gangani–Where God is the sculptor



Gangani-Gongoni-The-Grand-Canyon-Of-Bengal-Garhbeta

The first glimpse of Gangani and rivar Shilabati from the top

The grand vista of jagged columns of the canyon and the flowing river beneath opened up before my eyes as I stood on the natural ledge, offering a bird’s eye view of the surroundings.

The River Shilabati took a sharp bend here and stacks of red laterite soil formed deep gorges along the bank. In the distance the river bed turned white with the blooming ‘Kaash’ flower announcing advent of autumn. The sky was overcast, in a shade of drab grey. To my dismay it wasn’t the usual autumn cloudscape against the canvas of a deep blue sky. Nevertheless the sight was breathtaking.

Welcome to  Gangani, the Grand Canyon Of Bengal.

  

Some of you have been fortunate enough to witness the iconic Grand Canyon in Arizona, USA. For the less fortunate, Bengal has its own miniature grand canyon near the little town of Garhbeta in the district of West Midnapore. This is only about 175 odd KMs away from Kolkata where river Shilabati has cut through the rocks and laterite soil and created this little wonder.    

I had been to Gangani sometime in the year 2013, but I could not spend much time but I was smitten by the sheer beauty of this place and wanted to do a complete photo documentation of the entire area. I planned to come back here sometime soon but then finally it happened on September 17, 2017 when R.O.A.D (Revv On And Drive) a group of car & travel enthusiasts of which I am a part, organized a one day drive to Gangani.

Gangani-Gongoni-The-Grand-Canyon-Of-Bengal-Garhbeta

The journey begins. The  convoy lined up at Dhulagarh Toll Plaza

It was a usual fun day with friends. Starting early in the morning we met up near Dhulagarh toll plaza on NH-6 (Mumbai Road). Cars lined up and after few ‘Bhars’ of over sweetened tea and cigarettes the convoy headed towards Kolaghat.

Kolaghat, just after crossing the bridge on river Rupnarayan is the usual hotspot for breakfast for travellers on Mumbai Road. Here the road bifurcated towards Haldia and popular beach destinations of Digha & Mandarmani, hence the hordes of eateries and the dhabas on both side of the road are always abuzz with tourist and business travellers alike.

Our stopover was the NewTara Maa Hotel. The puffy white luchi coupled with alu-ghugni curry is fantastic deal for breakfast and people gorged on platefuls. They also make fantastic jumbo sized masala omelettes. However these guys go overboard with the garnishing and sprinkle copious amount of red chili powder and crumbled papads on top. So you need to tell them before hand to go easy and serve you sans these toppings.

From Kolaghat to Kharagpur it’s a clean run through six lane super smooth but rather boring expressway. This stretch of about sixty five odd kilometers was passed without much drama keeping a firm foot on the gas and needle hovering between 100 & 120kmph.

Gangani-Gongoni-The-Grand-Canyon-Of-Bengal-Garhbeta

The blooming Kaash on Rivar Kanshabati or kasai just ahead of Midnapur Town. 

The fun starts after the turn right onto NH-60 from Kharagpur crossing towards Midnapur town, which runs all the way to Ranigunj where it meets the NH-2. From here the road turns into a single lane. Though narrow, but this 50 odd KM stretch of road till Garhbeta is in good shape and runs through some beautiful country. In this season the blooming ‘kaash’ flower is a sight to behold while travelling. Just before Midnapur town we crossed the bridge over river Kanshabati. I could see the abundance of ‘Kaash’ on the sandy bed of the river. It’s like a white sea, the wind creating rippling waves sweeping across the field. As we progressed, the lush green landscape slowly turns arid, the color of soil gradually transforming to red and the road runs through beautiful stretches of forest past quaint little hamlets of Godapiashal and Chandrakona. The black shiny tarmac running through lush green forest is a treat to the eye.

Gangani-Gongoni-The-Grand-Canyon-Of-Bengal-Garhbeta

The stretch of NH 60 running through the forest

We made good time to Garhbeta. The drive was pleasant and we did not encounter heavy traffic on this stretch. We only had to negotiate thru’ some busy intersections near Salboni and Chandrakona.

From Garhbeta a road branches out from NH-60 towards left and leads straight to Gangani past the Garhbeta town. A few kilometers from Garhbeta, the habitation thins out and the landscape opens up. There is a sign on the right showing a gravel path leading to Gangani.

Gangani-Gongoni-The-Grand-Canyon-Of-Bengal-Garhbeta

The sight of the Canyon with river Shilabati in the background

First comes a huge field, and as you move towards the river, the ground suddenly drops off exposing the canyon. I was standing on the rim, on this narrow ledge high up jutting out into the empty space. The scenery hits you the moment you stand atop the rim of the gorge overlooking the flowing river far below. On the left tall stacks of red laterite soil runs along the bank and made strange, almost surreal formations. Thick rows of Kaash lined on both sides of the river. Far out on the opposite bank of the river I could see fishermen casting net.

Gangani-Grand-Canyon-Of-Garhbeta-West-Bengal-

Fishing on river Shilabati

Gangani-Grand-Canyon-Of-Garhbeta-West-Bengal-

The beautiful river side. 

Gangani-Grand-Canyon-Of-Garhbeta-West-Bengal-

Again it was abundance of Kaash on the riverbank

A winding concrete step goes down to the riverbed and then one can set to explore the interiors of the gorges and ravines on foot.

Gangani-Grand-Canyon-Of-Garhbeta-West-Bengal

The concrete staircase leading to the riverbed 

It was almost noon and though the sun did not shine through the layers of grey cloud, the heat was sweltering, hardly an ideal climate to explore the undulating landscape. The light wasn’t perfect for photography. But the beauty is so mesmerizing I decided to ignore the discomfort and do a photo documentation of the whole area.

Gangani-Grand-Canyon-Of-Garhbeta-West-Bengal

The narrow trails going inside the ravine

As I lurched & stumbled my way in through the narrow gravel strewn trails leading inside the gorge, suddenly it was as if I was transported into a different world. All around me, tall columns of hard laterite soil in amazing hue of colors rose high. Their sun baked tops are in deep shade of red and gradually melting into golden yellow towards the base. Over thousands of years, the water of river Shilabati had been cutting through the hard laterite soil creating gorges and the further deepening and widening it. The canyon is almost 70 feet deep. In the rainy months the rush of water flows through the meandering ravines and swirling water makes strange and often bizarre shapes to the Martian landscape through constant erosion. Certain parts looked like giant, craggy faces of some aboriginal demigods, and it wasn’t too hard to imagine few formations resembling some gigantic mythological animal. I could make out nebulous shapes and forms which looked like ancient pillared citadels & temples in ruins. 
Gangani-Grand-Canyon-Of-Garhbeta-West-Bengal

Inside the ravines

Gangani-Grand-Canyon-Of-Garhbeta-West-Bengal

Top view of the area

Gangani-Grand-Canyon-Of-Garhbeta-West-Bengal

The terrain difficult to negotiate but breathtakingly beautiful

Gangani-Grand-Canyon-Of-Garhbeta-West-Bengal

Now I stood before the giant paw

Gangani-Grand-Canyon-Of-Garhbeta-West-Bengal

Some more photos of the God's own sculpture

Gangani-Grand-Canyon-Of-Garhbeta-West-Bengal

Note the intricate textures formed by years of erosion

Gangani-Grand-Canyon-Of-Garhbeta-West-Bengal

Gangani-Grand-Canyon-Of-Garhbeta-West-Bengal

The most interesting and one of the centers of attraction is a natural cave in the shape of a temple, with a huge oblong opening. Though practically very shallow, it gives an eerie feeling of dark unknown depths harboring some evil monster inside. To further accentuate the creepy feeling, the soil formation on the sloped pathway leading towards the mouth of the cave looks like as if you are stepping past the giant carcass of a slain monster long buried deep and the remnants of its mighty ribs surfacing out of the graveled ground.

Gangani-Grand-Canyon-Of-Garhbeta-West-Bengal

The approach to the temple like cave of Bakasura. Note the rib-cage like formation which appears like remains of some prehistoric monster.

Gangani-Grand-Canyon-Of-Garhbeta-West-Bengal

Closure view of the cave

Gangani-Grand-Canyon-Of-Garhbeta-West-Bengal

View from the inside of the cave.

This perhaps had given birth to the local folklore that this area was once the home of the feared Bakasura, a character found in the Mahabharata. The legend goes that the second Pandava, the mighty Bhimsen, during exile, had slain Bakasura at this very place. The cave is referred as the home of Bakasura and it is believed that the giant skeleton like formation is actually the petrified remains of the demon.  

However the Mahabharta does have a reference that the Pandavas, during their exile stayed at a place named “Ekachakrapura”. The demon Bakasura lived in a cave on the nearby hill. Every week the villagers had to send one man or woman amongst them on a bullock cart loaded with meat, rice, curds, intoxicating liquors and many other delicacies to the Rakshasha, who would consume all including the humans. Bakasura had conquered their land and went on a rampage to loot and kill indiscriminately. Apparently the villagers came to this settlement with the demon that every week they will sent whatever is needed to his cave and in turn he will refrain from indiscriminate killing.

Pandavas, in their exile took refuge at a Brahmin’s home. It was one night during their stay when it was the turn of one of the family members of the Brahmin to go before the Rakshasa to offer sacrifice. Seeing the family in despair, mother Kunti ordered Bhimsen to go to the cave of Bakasura instead and kill him as a token of gratitude for the hospitality the family offered to the Pandavas. Thus Bhimsen killed Bakasura in a fierce battle near his cave.

The ancient kingdom of ‘Ekachakrapura’ can be traced to present day Ekachakra near Rampurhat in the district of Birbhum in West Bengal. However Ekchakrapur is some 220 kms away from Gangani and thus unclear how it is linked.to Gangani but the story lives on.

Gangani-Grand-Canyon-Of-Garhbeta-West-Bengal

View from the banks of river Shilabati

Gangani-Grand-Canyon-Of-Garhbeta-West-Bengal

Life at the village - Gangani


This is an amazing place even for a short day trip if you have a car or motorcycle. However I would strongly recommend you visit this place early in the morning. The gorges and ravines are east facing and looks best when the first rays of sun bathes the place in golden glow. That is the time for photography enthusiasts. Sadly it was noon when I reached and with overcast sky, I had struggled to make do with available light. I love to shoot on mobile phones. They have their limitations and don’t offer the versatility or the ability of a proper digital camera but then I love the challenge. All the photos here were shot with my new Samsung Galaxy J7 Max and it has given me some satisfactory results even under trying situations.

How to Reach:
The best route is to drive down through Mumbai Road (NH-6) from Kolkata till intersection of Kharagpur and Midnapur town. Then take a right onto NH-60 going past Midnapur, Salboni, Godapiasal, Chandrakona and finally reaching Garhbeta. From Garhbeta you have to take left through Garhbeta town past the police station and few kilometers after that Gangani, which is also known to locals as ‘Ganganir Danga’ will be on your right. Both NH-6 and NH-60 were in fairly good shape and generally well maintained. You will have a pleasant drive.

Another option is to go via Arambag, Kamarpukur road which also connects to NH-60 nearer to Bishnupur. Once on NH-60 you will have to turn right towards Garhbeta. From Garhbeta, it is same route as told above. Once you see the board announcing turn towards Gangani, take the gravel road to cover a short distance wherei t ends at Gangani. There is ample parking space on the open ground. On the right there is a walled section is reserved for picnic. I would presume during the winter holidays this place will be stormed by unruly people coming on buses and mini trucks with gigantic blaring speakers belting out incomprehensible songs with eardrum splitting decibel levels.

If you are going by train, the best option is to board the ‘Rupasi Bangla Express which leaves Santragachi station and 6:25AM and will drop you at Garhbeta Station by 9:20AM.  
  
What to eat:
There is only one eating joint near Gangani called ‘Suruchi’ which is close to Garhbeta college. You can expect basic Bengali cuisine here. Do carry mineral water bottles and some ORS particularly if you are visiting during hotter months. The hike through the ravines will make you very very thirsty.

Where to Stay:
There are no good hotels at Garhbeta barring some lodging facilities which are bare basic. In my mind if you wish to stay, the best bet will be the nearby temple town of Bishnupur which is only 37 kms away. There are multiple staying options there and you can drive down in your own or hired car early in the morning to reach Gangani to catch the beauty in early morning light.

Do avoid peak summer months. This part of Bengal gets really hot during summer. The name Gangani, probably is derived from Bengali adjective ‘Gongone’ which is used to describe the intensity of the heat. The bare red laterite soil heats up like a fiery oven in summer.

The best season for photography will be after the rains. If you are lucky you can shoot the canyon and combine it with some amazing textures of the sky. Winter is comfortable for exploration but the haze may play spoilsport at times.

Do share if you like the travelogue. 

You can reach me at sagar1969m@gmail.com or call or whatsapp at 9830091777