বহুকাল আগে মানে কম করে আট দশ বছর আগে তো বটেই, আনন্দবাজারে একটা লেখা বেরিয়েছিল্। লিখেছিলেন অমিতাভ মালাকার। গড়িয়া স্টেশানের কাছে স্বপনবাবুর শুওরের মাংস আর পরোটার দোকানের গল্প। স্টেশানের কাছে বাজারের মধ্যে নামগোত্রহীন অতিসাধারণ দোকান। মেনুর আড়ম্বর কিছুই নেই, জাস্ট গ্রেভি ওয়ালা, তেল ভাসা ঝাল ঝাল শুয়োরের মাংস। ছোট ছোট পিস কিউব করে কাটা মানে আধখানা মাংস আর আধখানা চর্বি, সঙ্গে ছোট ছোট মুচমুচে করে ভাজা পরোটা। সেটাই নাকি নিত্যযাত্রীদের মধ্যে হিট। সন্ধ্যে নামতে নামতেই বেশ কয়েক ডেকচি উড়ে যায়। এই অসাধারণ রান্নাটির কারিগর এবং দোকানের মালিক হলেন স্বপন দাস। এলাকায় স্বপনবাবুর দোকান নামেই পরিচিত। পুর্ববঙ্গ থেকে একসময় উদ্বাস্তু হয়ে আসা মানুষটি এখানেই দোকান খোলেন।
এটার পড়ার বেশ কিছুদিন পর, মানে হয়ত বছরখানেক পর আমি গিয়ে দোকানটা খুঁজে বার করেছিলাম। স্টেশানের কাছে গা জড়াজড়ি করে থাকা পান সিগারেটের দোকান, সব্জীবাজার, ফলের দোকান, সেলুন মায় তেলেভাজা আর মিষ্টির দোকানের ভিড় থেকে খুঁজে বার করা সহজ কাজ ছিল না, কিন্তু একটু জিজ্ঞাসাবাদ করতেই লোকে দেখিয়ে দিয়েছিল। একদমই ঝুপড়ি দোকান, রাস্তা থেকে দু ধাপ উঠে ঢুকতে হয়। মলিন চিটে বালব ঝুলছে, ঘোলাটে আলোয় দেখলাম ভেতরে দু একটা কাঠের টেবিল আর বেঞ্চি। কিন্তু দোকান খালি। দু:খের কথা আমার পৌঁছতে প্রায় সন্ধ্যা আটটা বেজে গিয়েছিল ততক্ষনে ডেকচি ফাঁকা হয়ে গেছে। কিন্তু স্বপনবাবুর সঙ্গে আলাপ হয়েছিল, সদাশয় মানুষ। আমাকে না খাওয়াতে পারার জন্য বারবার আক্ষেপ করলেন, পরের বার সাতটার মধ্যে পৌঁছে যেতে বলেছিলেন। কিন্তু ওই যে সেবার মিস হওয়ার পর তালেগোলে আর যাওয়াই হয়ে ওঠেনি। কিন্তু ভুলতেও পারিনি।
এর পর ফাস্ট ফরোয়ার্ড আরও প্রায় বছর তিনেক কেটে গেছে। ফেসবুকে একটা আলোচনা হচ্ছিল, কোলকাতার কোথায় কোথায় জমাটি পর্ক কারী বা পর্কের ঝোল পাওয়া যেতে পারে। মানে চাইনীজ / নর্থ ইস্টার্ন বা কন্টিনেন্টাল প্রিপারেশান ইত্যাদির তো অভাব নেই কিন্তু একদম দেশী রান্না পাওয়া যায় সেরকম ঠেক খোঁজা হচ্ছিল। সেই প্রসঙ্গেই স্বপনবাবুর দোকানের কথাটা লিখি।
এরপরেই যা হয়, বন্ধুবর অয়ন ঘোষ হুজুগ তুললো যাওয়া হোক, মেসেজ এলো সন্ধ্যাবেলায় ফ্রী কিনা। আমিও দেখলাম রোববারের সন্ধ্যেবেলা গাব জ্বাল দেওয়া ছাড়া বিশেষ কোন কাজ নেই সেজন্য এইরকম মহৎ উদ্দেশ্যে যাওয়া যেতেই পারে। অতএব চালাও পানসী গড়িয়া।
আগেরবারের অভিজ্ঞতা মনে রেখে এবার একটু আগে আগেই বেরোনো, এবারে মিস করা নেই, টার্গেট সাড়ে ছটা থেকে সাতটার মধ্যে ঢুকে যাওয়া। গড়িয়াহাট থেকে অয়নকে তোলতাই করে বাইপাস ধরে সোজা গড়িয়া স্টেশান। পাটুলির পরের মোড়টা, যেখানে মাথার ওপর দিয়ে মেট্রো রেল যায় সেখান থেকে বাঁদিকে রাস্তায় নাক বরাবর গেলেই গড়িয়া রেল স্টেশান। ভিড়ভাট্টা দেখে একটু আগেই গাড়ীটা রেখে হেঁটে গেলাম। এবারে চিনতে খুব একটা অসুবিধে হয়নি, মোড়ের দোকানটায় জিজ্ঞেস করতেই দেখিয়ে দিল। দোকানটা আগের বার যেরকম দেখে গিয়েছিলাম ঠিক সেরকমই আছে। দুতিনটে কাঠের বেঞ্চি। দেওয়ালে বেগুনী রঙ, গায়ে একটা বালব ঝু্লছে, নীচে মা তারার ছবি আর একটা কাগজে লেখা,
"রান্না করা শুকরের মাংস পাওয়া যায়।"
প্রতি প্লেট ২৬ টাকা, পরোটা ২ টাকা পিস।
সামনে চৌকির ওপর প্রমান সাইজের একটা ডেকচি নিয়ে একজন বসে আছেন। অনেক আশা নিয়ে দুরুদুরু বুকে উঁকি মেরে দেখি ভাগ্য সুপ্রসন্ন, ডেকচিতে ঝলমল করছে শুকর মাংসের ঝোল। হটকেসে রাখা পরোটাও আছে।
টেস্ট দারুণ, কষে বানানো তেল ভাসা লাল ঝোলে মাখানো মাংসের ছোট ছোট পিস, একদম সফট, চর্বির সঙ্গে পারফেক্ট ব্যালান্স। গ্রেভিটাই মারকাটারী, মানে টেনিদার ভাষায় ডি লা গ্র্যান্ডি মেফিস্টোফিলিস,,, ইয়াক ইয়াক ব্যাপার। কিন্তু পরোটাগুলোই জমল না, লেখায় যেমন পড়েছিলাম সেই মুচমুচে ব্যাপারটাই নেই, উলটে একটু কাঁচা কাঁচা ভাব। আমাদের দুজনারই বিশেষ পছন্দ হয়নি।
স্বপনবাবুর সঙ্গে এবারে দেখা হয় নি, দোকান চালাচ্ছেন ওনার ছেলে, খোকন দাস। রান্নাও উনিই করছেন।
পর্ক প্রেমীরা ঘুরে আসতে পারেন তবে একটা 'বিধিসম্মত সতর্কীকরণ' দিয়ে দি। এটা কিন্তু রেস্টুরেন্ট নয়, ছবি দেখেই নিশ্চই আন্দাজ পাচ্ছেন। বাজারের মধ্যে ছোট্ট দোকান, একেবারেই বেসিক ব্যাবস্থা, ঠিক মত বসে খাওয়ারও বন্দোবস্ত নেই, ভিড় হলে তো আরও মুশকিল। যদি হাইজিন জিজ্ঞাসা করেন সেটারও কোন গ্যারান্টি নেই। তবে একটাই ভরসা, দোকানটা চলছে আজ প্রায় সাঁইত্রিশ বছর হয়ে গেল, রোজ বড় একটা ডেকচি শেষ হয়ে যায়, গরমকালে ডেকচির সাইজ শুধু ছোট হয়। খাবারে গন্ডোগোল থাকলে এই এলাকায় অন্তত এ দোকান টিঁকতে পারত না। মনে রাখবেন এঁদের রেগুলার খদ্দের এই লাইনের ডেলী প্যাসেঞ্জাররা। আর ডেলি প্যাসেঞ্জার চটানো যে কি বিষম ব্যাপার তা আশাকরি জানবেন।
আমার মনে হয় সবচেয়ে ভাল যদি একটা গোদা টিফীন বাক্স নিয়ে গিয়ে জাস্ট শুওরের কারীটা কিনে আনা যায়। এবার বাড়ীতে আরাম করে থেবড়ে বসে রুটি, পাঁউরুটি, ভাত, পোলাও যা মন চায় তাই দিয়ে খাওয়া যেতে পারে। আমার মিত্র কলকাতার অন্যতম অগ্রণী ফুড ব্লগার মহাগুরু ইন্দ্রজিৎ লাহিড়ী মহাশয়ের নিদান ছিল সুগন্ধি গোবিন্দভোগ চালের ফুরফুরে ভাতের সঙ্গে মেখে খাওয়া। আমার মনে হয়েছে যদি একদনের বাসী আটার লুচি গরম করে তাই দিয়ে খাওয়া যায় তাহলে ব্যাপারটা একটা অন্য লেভেলে নিয়ে যাওয়া যাবে। আমার দ্বিতীয় পছন্দ কড়া করে সেঁকা কোয়ার্টার পাউন্ড পাঁউরুটি গ্রেভীতে মাখিয়ে মাখিয়ে খাওয়া।
এবার আপনারা ভাবুন কিভাবে খেতে চান।
কিছু জরুরী তথ্য।
দোকান খোলে শুধু সন্ধ্যাবেলায়, বৃহস্পতিবার বন্ধ থাকে।অবশ্যই চেষ্টা করবেন সন্ধ্যে সাতটার আগে পৌঁছতে নইলে হতাশ হবার সম্ভাবনা ষোল আনা। যদি ইএম বাইপাসের দিক থেকে গড়িয়া স্টেশান রোড ধরে আসেন তাহলে দেখবেন রেল ওভারব্রিজটা পেরিয়েই একটা রাস্তা ডান দিকে কেটে বাজারের মধ্যে গেছে। চিনতে অসুবিধে হলে খোকন দাসকে ফোন করে নিতে পারেন। ফোন নং ৯৮০৪৭০৪১৬৭
ছবিঃ অয়ন ঘোষের সৌজন্যে।
Darun info dada. Apnake arekta similar deshi pork curryr sandhan di, etao Garia te. Kabi Nazrul metro stn theke nebe jodi towards right jan Tahole just metro overhead bridge ta cross korei main road e ba dike ekta thela paben jeta chalan Netaida namer ek middle aged bhodrolok. Uni Abar boshen roj evening 7 tar por. Onar thela te Duto dechki - ekta te amrita saman suorer mangsher lal curry r onno ti tey same preparation er murgir cchat. Sathe hat Ruti. Anobodya. Try kortey paren. Highly recommended.
ReplyDeleteআমাদের দমদম ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনের বাইরে টিকিট কাউন্টার পেরিয়েই, এরকম 3-4টে ঠেলা গাড়ি দোকান আছে, শুয়োরের কষা বেচে হাত রুটির সাথে। দারুন স্বাদ আর দামও খুব কম। ট্রেনের নিত্যযাত্রীরা খায়, আমিও খেয়েছিলাম। তখন 10 টাকায় 1 প্লেট দিত, চারটে করে চৌকো পিস থাকত। এখন কত হয়েছে জানি না।
ReplyDeleteদুর্দান্ত ফাটাফাটি ! লেখার হাতটি বেশ খোলতাই ।
ReplyDeleteThis is awesome and amazing post.
ReplyDeletehttps://www.bharattaxi.com/kolkata
Akhon kolkhatar bandal e kothai jai
ReplyDelete